Logo

আন্তর্জাতিক    >>   ব্রিকস কি পশ্চিমের আধিপত্য ঠেকাতে সক্ষম হবে?

ব্রিকস কি পশ্চিমের আধিপত্য ঠেকাতে সক্ষম হবে?

ব্রিকস কি পশ্চিমের আধিপত্য ঠেকাতে সক্ষম হবে?

আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে নতুন যুগের সূচনা হয়েছে। বিশ্ব অর্থনীতির আকারে পশ্চিমা দেশগুলোর প্রভাব কমছে, এবং একটি বহুমুখী বৈশ্বিক কাঠামো গড়ে উঠছে। ক্রমশই বিভিন্ন দেশ তাদের নিজেদের অবস্থান নিশ্চিত করতে প্রতিযোগিতায় নেমেছে, বিশেষত উদীয়মান অর্থনীতিগুলো। এই প্রতিযোগিতার মধ্যে সম্প্রতি সম্প্রসারিত ব্রিকস (ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত, চীন ও দক্ষিণ আফ্রিকা) জোট একটি নতুন বিশ্বব্যবস্থার নেতৃত্ব দিতে চাইছে।

ব্রিকসকে একসময় শুধুমাত্র কয়েকটি উন্নয়নশীল দেশের সম্পদভিত্তিক গোষ্ঠী হিসেবে দেখা হতো। কিন্তু বর্তমানে এটি পশ্চিমা নেতৃত্বাধীন বিশ্বব্যবস্থার বিরুদ্ধে একটি প্রতিরোধ গড়ে তোলার প্রতীক হয়ে উঠেছে। সম্প্রসারিত ব্রিকস জোটকে অনেকেই ভূরাজনৈতিক অনিশ্চয়তা কাটিয়ে উঠার বিকল্প উপায় হিসেবে দেখছে।

চলতি বছর ব্রিকস তার সদস্য সংখ্যা পাঁচ থেকে নয়টি দেশে বাড়িয়েছে, যেখানে মিসর, ইথিওপিয়া, ইরান ও সংযুক্ত আরব আমিরাত নতুনভাবে যুক্ত হয়েছে। এছাড়া ন্যাটোর সদস্য তুরস্ক এবং যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র থাইল্যান্ড ও মেক্সিকোসহ প্রায় তিন ডজন দেশ ব্রিকসে যোগ দেওয়ার জন্য আবেদন করেছে। যদিও এই বৈচিত্র্য ব্রিকস প্লাসের আকর্ষণ বাড়িয়েছে, তবে এটি কিছু চ্যালেঞ্জও সৃষ্টি করেছে।

ব্রিকসের সদস্য দেশগুলোর রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক কাঠামো এবং জাতীয় লক্ষ্যগুলির মধ্যে বিশাল ভিন্নতা রয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, চীন ও ভারতের মধ্যে হিমালয় অঞ্চলে সামরিক সংঘাতের কারণে দেশদুটির সম্পর্ক ক্রমাগত বিরোধপূর্ণ।

ব্রিকস যখন পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট ছিল, তখনই জোটের জন্য একটি সাধারণ কর্মপরিকল্পনা তৈরি করা কঠিন ছিল। বর্তমানে সদস্য সংখ্যা বেড়ে নয়টি হওয়ায় এবং ভবিষ্যতে আরও সদস্য যুক্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকায়, এই জোটের অভিন্ন পরিচয় ও লক্ষ্য স্থির করা কঠিন হয়ে উঠতে পারে।

উল্লেখ্য, জি-৭ ও জি-২০-এর মতো অন্যান্য বহুপক্ষীয় জোটগুলোও অভ্যন্তরীণ বিভেদের সম্মুখীন। তবে ব্রিকস তার স্থিতিস্থাপকতা প্রদর্শন করেছে। পশ্চিমা বিশ্লেষকরা জোটটির প্রাসঙ্গিকতা নিয়ে বরাবরই সন্দেহ পোষণ করেছেন। কিন্তু সম্প্রসারণের মাধ্যমে ব্রিকস প্রমাণ করছে যে এটি একটি কার্যকর শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হতে সক্ষম।

ব্রিকসের প্রতিষ্ঠাতা সদস্যরাই অনেক ক্ষেত্রে মৌলিক লক্ষ্যগুলো নিয়ে একমত হতে পারেনি। উদাহরণস্বরূপ, চীন ও রাশিয়া যেখানে সরাসরি যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন বিশ্বব্যবস্থার বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিতে চায়, সেখানে ব্রাজিল ও ভারত বিদ্যমান ব্যবস্থার সম্পূর্ণ বিরোধিতা না করে তার সংস্কার চায়। তাদের কাছে পশ্চিমা বিশ্বের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখা গুরুত্বপূর্ণ।

রাশিয়া ও চীনের সম্পর্কও বিশেষভাবে গুরুত্ববহ। রাশিয়া তার আন্তর্জাতিক রপ্তানির একটি বড় অংশ চীনা মুদ্রা রেনমিনবিতে অর্জন করছে, যা কার্যত চীনের জন্য লাভজনক। চীনের লক্ষ্য একটি বিকল্প রেনমিনবিভিত্তিক আর্থিক ব্যবস্থা গড়ে তোলা, যা পশ্চিমা আর্থিক ব্যবস্থা থেকে স্বাধীন হবে।

ব্রিকস ইতিমধ্যেই প্রতিষ্ঠানের দিকে মনোনিবেশ করেছে। ২০১৫ সালে ভারতের উদ্যোগে ব্রিকসের পক্ষ থেকে নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এনডিবি) প্রতিষ্ঠা করা হয়, যা উদীয়মান অর্থনীতির জন্য বিশ্বের প্রথম বহুপক্ষীয় উন্নয়ন ব্যাংক। এনডিবি বিশ্বব্যাংকের বিকল্প হিসেবে কাজ করছে, যেখানে প্রতিটি প্রতিষ্ঠাতা সদস্যের সমান শেয়ার ও ভোটাধিকার রয়েছে।

ব্রিকস প্লাস বর্তমানে বিশ্বের মোট জনসংখ্যার ৪৬ শতাংশ প্রতিনিধিত্ব করছে, যা জি-৭-এর মাত্র ৮ দশমিক ৮ শতাংশের বিপরীতে বিশাল সংখ্যক। অর্থনৈতিকভাবে ব্রিকস প্লাস বিশ্ব অর্থনীতির ৩৫ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ করছে, যেখানে জি-৭-এর অধীনে রয়েছে ৩০ শতাংশ।

ব্রিকস প্লাসের সম্প্রসারণ বৈশ্বিক ক্ষেত্রে বিশাল প্রভাবশালী শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। তবে জোটটির সামনে অনেক চ্যালেঞ্জও রয়েছে, বিশেষ করে একটি সুসংহত বৈশ্বিক শক্তি হিসেবে গড়ে উঠার ক্ষেত্রে। তা সত্ত্বেও, ব্রিকস বৈশ্বিক শক্তি কাঠামোর পরিবর্তনের দিকে ধাবিত হচ্ছে এবং একুশ শতকের বাস্তবতাকে গ্রহণ করে আন্তর্জাতিক মঞ্চে ভূমিকা রাখতে পারে।





P.S 220 Winter concert

P.S 220 Winter concert